Thursday, April 14, 2011

এসো মিলি প্রাণের উৎসবে






কালের কণ্ঠের :চৌধুরী আফতাবুল ইসলাম
প্রায় ৩০ হাজার বছর আগে প্যালিওলিথিক যুগের মানুষ গুহার পাথুরে দেয়ালে ছবি আঁকতে শুরু করেছিল। পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো গুহাচিত্রটি মিলবে ফ্রান্সের শোভেতে। স্পেনের আলতামিরার পাহাড়ের গায়ে প্রাগৈতিহাসিক যুগে আঁকা বাইসনটি প্রাচীনতম শ্রেষ্ঠ চিত্রকর্ম। প্রাচীন ইতিহাস আর খণ্ড সময় স্তব্ধ হয়ে আছে শ্রাবস্তির কারুকার্যে। মিসরের হায়ারোগি্লফিকের প্রচ্ছদে প্রচ্ছদে আছে ফারাওদের শ্রেষ্ঠত্বের উচ্চকিত ঘোষণা। আর তাতেই উদ্বুদ্ধ হয়ে সম্ভবত নেপোলিয়ন তাঁর রাজকীয় প্রতীক করেছিলেন একটি মৌমাছি। কারণ হায়ারোগি্লফিকে শাসক শব্দটির চিত্রচিহ্ন মৌমাছি। এসব চিত্রকর্মের সৃষ্টি নিজেকে প্রকাশের তাগিদ থেকেই। ঠিক তেমনিভাবে আমরা মানে বাঙালির নিজস্বতার শ্রেষ্ঠতম পিক্টোরিয়াল স্ক্রিপ্টটি (চিত্রলিপি) তৈরি হয় প্রতি বৈশাখের প্রথম দিনটিতে। যেমন হবে আজও। নববর্ষ ১৪১৮-এর সূচনা দিনে আবারও বাংলার ত্রিমাত্রিক ক্যানভাস আরেকটি অনন্য শিল্পকর্ম হয়ে উঠবে। আজ বাংলাদেশের পথে-প্রান্তরের প্রতিটি দৃশ্য যেন একটি জাতির আপন ঐতিহ্য, স্বাধীনতা আর আবহমান সংস্কৃতির নান্দনিক সনদচিত্র। চারপাশের
এরকম অজস্র ফ্রেমের সমন্বয়ে সম্পূর্ণ হবে বাঙালির নিজস্বতা, ঐতিহ্য আর অহঙ্কারের চিত্রকর্মটি।
যদিও এখনো বাতাসে বসন্তের গন্ধ। আসমানে চৈত্রের নিদাঘ। এরই মধ্যে নতুনকে বরণের আয়োজন গ্রীষ্মকে ছোঁয়ার বাসনায়। বিশ্বায়নের বাজারে যখন গ্লোবাল জাতীয়তার জয়ধ্বনি, সাইবার স্পেস, স্যাটেলাইট টেলিভিশন আর সামাজিক নেটওয়ার্কের অলিগলিতে যখন বিশ্বসংস্কৃতির সুনামি_সেই সময়ে নিজেকে খুঁজে ফেরার তাগিদটা খুবই আশাজাগানিয়া। আমরা আমাদের আপন ঐতিহ্য, সংস্কৃতিকে সংরক্ষণ এবং ধারণ করেই বিশ্ব নাগরিক হব_বাঙালি মানসে এই বোধটি এখন খুবই প্রবল।
সময় যতই এগিয়ে যাক, জীবন যতই দ্রুততর হোক, অগোচরে ঠিকই প্রতিটি বাঙালির মনের ভেতরে ডানা ঝাপটায় সাবেকি বাংলার প্রান্তিক সমাজ, লোকজ আচার-সুর। ওই যে, প্রাজ্ঞ মানুষেরা বলেন না, যতই বদলানোর হাতছানি থাক, সময়, নিজ প্রকৃতি, ঐতিহ্য কী এক প্রগাঢ় নিবিষ্টতায় ছুঁয়ে থাকে জীবনকে। যতই প্রতিযোগিতা থাক, ব্যস্ততা চেপে বসুক, চিরন্তন সেই রূপসী বাংলা ঠিকই বুকের ভেতরে জেগে থাকে। সে জন্যই নববর্ষের এই একটি দিনকে উপলক্ষ করে বাঙালির নিজস্ব উৎসবের এমন নিপাট আয়োজন। যেখানে ধর্ম নেই, শ্রেণী নেই, বিভেদ নেই_শুধুই এই ভূখণ্ডের নিজস্ব লোকাচারের সর্বজনীন দর্শনে উচ্ছ্বাসে মেতে থাকা।
_'তোমরা যেখানে সাধ চলে যাও_আমি এই বাংলার পারে রয়ে যাব; দেখিব কাঁঠালপাতা ঝরিতেছে ভোরের বাতাসে...।' শুভ নববর্ষ ১৪১৮।

No comments:

Post a Comment