Thursday, April 14, 2011

 শেয়ারবাজার তদন্ত প্রতিবেদন ১০ টাকার শেয়ার দাম বাড়ানোর আরেক কারসাজি


Prothom Alo:
 
দাম বাড়ানোর আরেকটি কৌশল ছিল শেয়ারের বিভাজন। ১০০ টাকার শেয়ার ১০ টাকা করতেই দাম বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে। এ কাজে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়েছে কোম্পানিগুলো।
৭ এপ্রিল খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি অর্থমন্ত্রীর কাছে তদন্ত প্রতিবেদনটি জমা দিয়েছে। এই প্রতিবেদনে নানাভাবে কারসাজি করে শেয়ারবাজার পতনের অনেকগুলো ঘটনার কথা জানানো হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘স্টক স্প্লিট’ বা বিভাজনের মাধ্যমে শেয়ারের অভিহিত মূল্যকে খণ্ডিত করে অপেক্ষাকৃত স্বল্প বা ছোট করা হয়। যদিও শেয়ার বিভাজনের ফলে অভিহিত মূল্য সমন্বয় ছাড়া কোম্পানির আয় বা সম্পদের ওপর কোনো প্রভাব ফেলে না, প্রভাব থাকার কথাও নয়। কিন্তু তদন্তে দেখা গেছে, শেয়ার বিভাজনের কারণে ২০০৯-১০ সালে পুঁজিবাজারে শেয়ারের মূল্য ও তারল্যের ওপর অপ্রত্যাশিত প্রভাব পড়েছে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের মনস্তাত্ত্বিক দুর্বলতাকে পুঁজি করে বিভাজিত শেয়ার কেনার প্রতি তাদের আগ্রহ বাড়িয়ে দিয়ে শেয়ারের বাজারমূল্যের ওপর অতিমাত্রায় প্রভাব ফেলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৯ ও ২০১০ সালে মোট ৬২টি তালিকাভুক্ত কোম্পানি শেয়ার বিভাজন করেছে। কোম্পানিগুলো শেয়ার বিভাজন শুরু করে ২০০৯-এর জুলাই থেকে। ৯ জুলাই প্রথম শেয়ার বিভাজনের ঘোষণা দেয় প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড। এর পর থেকে ২০১০-এর ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে পুঁজিবাজারের বড় ধরনের পরিবর্তন হয়েছে। যেমন, ২০০৯ সালের ২ জুলাই অভিহিত মূল্য ১০০ টাকা থেকে ১০ টাকায় বিভাজন করা ৬১টি কোম্পানির বাজার পুঁজিকরণ ছিল ৩০ হাজার ছয় কোটি টাকা। আর ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর তা হয় দুই লাখ ২৬ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ বৃদ্ধির হার ৬৫৫ শতাংশ। অন্যদিকে অবিভাজিত কোম্পানিগুলোর বাজার পুঁজিকরণের পরিমাণ ছিল ৯৬ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা, এক বছর পর সেটি দাঁড়ায় এক লাখ ৪১ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার ৪৬ শতাংশ।
এসব তথ্য দিয়ে তদন্ত কমিটি বলেছে, এক বছরে বাজার পুঁজিকরণ বাড়ার পেছনে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের কোম্পানিগুলোর অবদান ছিল সাড়ে ৮১ শতাংশ। আর এই ৬২টি কোস্পানির মধ্যে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৫টি। এর বাইরে বিমা কোম্পানি ছিল ২১টি। তবে সবচেয়ে বেশি পুঁজিকরণ বেড়েছে টেক্সটাইল খাতের কোম্পানিগুলোর।
কমিটি আরও বলেছে, শেয়ার বিভাজনের কারণে শেয়ার মূল্যের ওপর সার্কিট ব্রেকার আরোপ করা হলেও এর কার্যকারিতা বেশ খানিকটা ব্যাহত হয়। শেয়ারমূল্যের স্তর যত বড় হবে, শেয়ারমূল্যের হ্রাস-বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য আরোপিত সার্কিট ব্রেকারের হারও তত কম হবে। প্রতিবেদনে উদাহরণ দিয়ে বলা হয়েছে, শেয়ারমূল্য ২০০ টাকা পর্যন্ত সার্কিট ব্রেকার ২০ শতাংশ, আর শেয়ারের বাজার দর পাঁচ হাজার টাকার ঊর্ধ্বে হলে সার্কিট ব্রেকার সাড়ে ৭ শতাংশ। শেয়ার বিভাজনের কারণে উচ্চতর সার্কিট ব্রেকার প্রযোজ্য হয় বলে বিভাজিত শেয়ারগুলো বাজারমূল্য বা বাজার পুঁজিকরণ দ্রুত বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে।
কমিটি মনে করে, শেয়ার বিভাজন প্রসঙ্গে এসইসির ভূমিকাও অত্যন্ত দোদুল্যমান বা দৃঢ় ছিল না। এসইসি ২০১০ সালের ১ মার্চ সার্কুলার দিয়ে সব শেয়ারের অভিহিত মূল্য ১০০ টাকা ধার্য করে দেয়। পরে আবার ১০ মে সেটি পরিবর্তন করে ১০ টাকা হয়। আবার সেটিও স্থগিত করা হয় ২০১১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। এসইসির ঘন ঘন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন বাজার নিয়ন্ত্রণকারীদের দুর্বলতা প্রকাশ করে এবং ওই সুযোগ ব্যবহার করে বাজার কারসাজির হোতারা।
লুৎফর রহমানের প্রতিবাদ: মো. লুৎফর রহমান বাদল গতকাল এক প্রতিবাদলিপিতে বলেছেন, কিছুদিন ধরে কয়েকটি পত্রিকা দেশের বিশিষ্ট ব্যবসায়ীদের সম্পর্কে কদর্যভাবে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করে চলেছে। এসব সংবাদের পক্ষে কোনো প্রকার তথ্য, যুক্তি কিংবা প্রমাণের তোয়াক্কা না করে যেসব সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে, তা সুস্থ সাংবাদিকতার পরিপন্থী এবং আইনগতভাবেও গ্রহণযোগ্য নয় বলে তাঁদের আইনজীবীরাও নিশ্চিত করেছেন।
প্রতিবাদলিপিতে আরও বলা হয়, তদন্ত প্রতিবেদনে জোর দিয়েই বলা হয়েছে কোনো ব্যক্তিবিশেষ নয়, বরং গোটা ব্যবস্থাই ধসের কারণ। আর ব্যবসামাত্রই মুনাফার জন্য, সে ক্ষেত্রে আইনের মধ্যে থেকে কেউ যদি কোনো প্রকার কৌশলের আশ্রয় নিয়েও থাকেন, তা দেখার বা বন্ধ করার দায়িত্ব নিয়ন্ত্রক সংস্থা, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারের। এ ক্ষেত্রে কোনো প্রমাণ ছাড়া ঢালাও অপপ্রচার দেশের ব্যবসা ও অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকারক হবে। লুৎফর রহমান কোনো আইনবহির্ভূত কাজ করেননি উল্লেখ করে চিঠিতে গণমাধ্যমের কাছে জবাবদিহি দাবি ও অবিলম্বে সংবাদ প্রকাশ বন্ধের দাবি জানান।
প্রতিবেদকের বক্তব্য: প্রকাশিত সব সংবাদই তদন্ত প্রতিবেদন থেকে নেওয়া। এখানে নিজস্ব কোনো বক্তব্য ছিল না।
 
 

No comments:

Post a Comment